বাঁশের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে ব্যবসা

বাঁশ শিল্প

আমাদের গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় লোকশিল্প শিল্প বাঁশ শিল্প। বাঁশের তৈরি এই শিল্প বাংলার বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ছাড়াও আদিবাসীদের জীবনাচরণ ও অনুভূতির প্রতীক। এই শিল্পের প্রধান কাচামাল হলো বাঁশ। গ্রামের লোকেরা এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত এবং বেশির ভাগ তারাই এসব ব্যবহার করে থাকে। বাঁশের নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে। যেমন- ঘর, মাচা, মই, মাদুর, ঝুড়ি, ফাঁদ, হস্তশিল্প ইত্যাদি ছাড়াও মৃতদেহ সৎকার ও দাফনের কাজেও বাঁশের ব্যবহূত হয়। বাঁশকে গ্রাম বাংলার দরিদ্র মানুষের দারুও বলা হয়। নিত্য ব্যবহার্য  বাঁশ শিল্পটি কালক্রমে  লোকসংস্কৃতি ও কারুশিল্পের প্রধান উপকরণ হয়ে উঠেছে।বাঁশের ২৬টি প্রজাতির মধ্যে মুলিবাঁশ, তল্লাবাঁশ ও বইরা বাঁশ দিয়ে শিল্পকর্ম তৈরি করা সহজ। বাঁশের তৈরি শিল্পকর্ম দীর্ঘস্থায়ী না হলেও লোকজীবনে ব্যবহারের বহুমাত্রিকতা ও প্রয়োজনের কারণে এই শিল্পকর্ম বংশপরম্পরায় চলে আসছে।

বাঁশের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র 

বাঁশের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র 

বাঁশ দিয়ে কি কি তৈরি করা যায়

বাঁশের তৈরি জিনিস এর মধ্যে রয়েছে দরমার বেড়া, বাঁশের খুঁটি বা লাঠি, ডোলা, কুলো, ঝুড়ি, চালুনি, ধুচুনি, ডোকা-থুনচে বা পিঠা কাল্লোয়াং, বাঁশের মাচা, মই, মোড়া, চাটাই ইত্যাদি। মাছ ধরার কোঁচ, বানা, ছিপ, শটকা, পাঙ, ঘুনি, পলুই, খালুই সবই বাঁশের তৈরি। প্রতিমা মূর্তির মূল কাঠামােও বাঁশ-খড়ের।কাগজ তৈরিরও কাঁচামাল বাঁশ। পাগল করা বাঁশের বাঁশি। কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য বাঁশের তৈরি মাথাল, ওরা, ভার, ঝুড়ি ইত্যাদি। নগরজীবনে বাঁশের তৈরি আসবাবও লক্ষ করা যায়। যেমন- ছাইদানি, ফুলদানি, প্রসাধনী বাক্স, ছবির ফ্রেম, আয়নার ফ্রেম ইত্যাদি।

বাঁশের তৈরি হাতের কাজ

বাঁশ দিয়ে তৈরি আসবাবপত্র এর ব্যবসা

বাঁশ দিয়ে তৈরি আসবাবপত্র এর ব্যবসা উৎপাদনমূলক এবং লাভজনক। এ ব্যবসা নিয়ে আগে হাসি-ঠাট্টা হলেও এখন আর তার সুযোগ নেই। বাঁশ দিয়ে বানানো আসবাবপত্রের দাম অনেক কম এবং ভালোভাবে যত্ন নিয়ে তৈরি করলে বিশ বছরের বেশি স্থায়িত্ব দেওয়া সম্ভব। বাঁশ দিয়ে বানানো খাট বিক্রি করে শতকরা ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ ভাগ লাভ করা যেতে পারে। একজন স্বাবলম্বী ও মাঝারি মানের উদ্যোক্তা হিসেবে বাঁশ দিয়ে তৈরি আসবাবপত্র এর ব্যবসাটি হতে পারে একটি যুগান্তকারী ব্যবসার ধারণা। বাঁশের জিনিসপত্রের দাম কম হওয়ায় এটি একটি জনপ্রিয় ব্যবসা।

একটি ঘর বা বাড়ি সাজাতে যে আসবাবপত্র প্রয়োজন হয় যেমন- খাট সোফা ডাইনিং টেবিল সাধারণ টেবিল-চেয়ার মোরা দোলনা ইত্যাদি সাধারণত কার্ড দিয়ে তৈরি হয়। একই আসবাবপত্র আবার বাঁশ ও বেত দিয়ে বানানো যায়, এমনকি দেশীয় ডিজাইন বিদেশি ডিজাইনের বাসায় তৈরি আসবাবপত্র বানিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে পারেন

কেন এই ব্যবসাটি শুরু করবেন

এটি একটি লাভজনক ব্যবসা যা সময়ের সাথে সাথে এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র ব্যবসাটির ঝুঁকির পরিমাণ কম থাকায় অনেক তরুণ উদ্যোক্তা এই ব্যবসাটি শুরু করতে আগ্রহী। বাড়ির নারীরাও এই ব্যবসাটি করতে পারে বলে এটি একটি জনপ্রিয় ব্যবসা হিসেবে পরিচিত। স্বপ্ল বিনিয়োগ করে অনেক টাকা আয় করা যায়। বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র ভালোমানের হলে এগুলো তৈরি করে বিদেশেও রপ্তানি করার সুযোগ আছে।

সম্ভাব্য পুঁজি

এই ব্যবসাটি শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে করে নিতে হবে। স্থানীয় প্রযুক্তির দিয়ে বানিয়ে নিতে পারলে দশ লাখ টাকায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে ব্যবসার কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে।  সবমিলিয়ে দশ থেকে পনের লাখ টাকা হলে আপনি মোটামুটি বাঁশ দিয়ে তৈরি আসবাবপত্র বানানোর ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

বাঁশের তৈরি হাতের কাজ

প্রত্যেক ব্যবসা শুরুর করার পূর্বেই একটি সঠিক বিজনেস প্ল্যান দরকার। বাঁশ কোথা থেকে কিনবেন দরদাম কেমন হবে সারা বছর দাম একই রকম থাকে কিনা। কি জাতের বাঁশ দিয়ে আসবাবপত্র তৈরীর জন্য ভালো হবে। প্রথমে বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র তৈরি করতে মেশিনের মাধ্যমে বাঁশ কাটতে হবে। তারপর আপনার পছন্দ অনুযায়ী কি তৈরি করবেন তার উপর নির্ভর করবে। বিভিন্ন ডিজাইনের নকশা দিয়ে খাট, সোফা, ডাইনিং টেবিল, চেয়ার ইত্যাদি আসবাবপত্র তৈরি করা হয়। বিভিন্ন রং ব্যবহার করে সুন্দর ও রুচিশীল আসবাবপত্র তৈরি করা যায়

বাজারজাতকরণ 

বাঁশের তৈরি আসবাবপত্রের বাজারের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কাঠের তুলনায় বাঁশের তৈরি আসবাবপত্রের দাম কম হওয়ার জন্য বেশিরভাগ মানুষ সহজে এই পণ্যটি কিনতে পারে। গ্রমে অনুষ্ঠিত মেলায় আপনার উপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারেন। শহরের বিভিন্ন ফার্নিচার দোকান এ পণ্যটি বিক্রি করতে পারেন। তা ছাড়া অনলাইন ই-কমার্স  প্লাট ফর্ম তৈরি করে আপনি বাজারজাত করতে পারেন।

যোগ্যতা

পর্যাপ্ত যোগ্যতা বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকলে কোন ব্যবসাই সফলতার মুখ দেখতে পারে না। কিন্তু বাঁশের তৈরি আসবাবপত্রের জন্য বিশেষ কোনো যোগ্যতার দরকার নেই। নিজে না পারলে দক্ষ কারিগর নিয়োগ দিয়ে উৎপাদন ও বিক্রি করা যেতে পারে। গ্রাহকের পছন্দমত আসবাবপত্র বানিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা তৈরি করতে হবে।

বেকার না থেকে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন। নিজে স্বাভলম্বি হোন এবং এ সকল কুটির শিল্পের মাধ্যমে অপরকে কাজ করে খেটে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।

1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
নবীনতর পূর্বতন