বাংলার নান্দনিক মৎশিল্প ও মাটির তৈরি জিনিসপত্র

মৃৎশিল্প ছবি



মৃৎশিল্পের প্রধান উপাদান কি

আমাদের বাংলাদেশ রূপ বৈচিত্রময় দেশ। এদেশে বহু প্রাচীন কাল থেকেই হাজার ধরনের সংস্কৃতি পালন করা হয়। মৃৎশিল্প হলো যার একটি নিদর্শন। আমাদের মৃৎশিল্পের এক সমৃদ্ধশালী ঐতিহ্য রয়েছে। 'মৎ' মানে মাটি আর শিল্প’ মানে সুন্দর সৃষ্টিশীল বস্তু। সুতারাং মাটি দিয়ে তৈরি শিল্পকর্মকে মৃৎশিল্প' বলে, এবং যারা এই শিল্পকর্মের সঙ্গে জরিত তাদের বলা হয় কুমার। কুমররা শৈল্পিক দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা ও মনের মধ্যে লুকায়িত মাধুর্য দিয়ে চোখ ধাঁধানানো সব কাজ করে থাকেন। মৃত শিল্পটি হল বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও পুরানো একটি শিল্প যা আমাদের গৌরবময় ঐতিহ্য বহন করে।

মৃৎশিল্প ছবি


মৃৎশিল্পের বর্তমান অবস্থা

কালের পরিক্রমায় শিল্পায়নের যুগে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই মৃৎ শিল্প। দেশীয় বাজারে যথেষ্ট চাহিদা না থাকার ফলে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজের পরিধি পরিবর্তন না করা, কাজে নতুনত্বের অভাব, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসঙ্গতি, কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত মাটির মূল্য বৃদ্ধি, কাঁচামাল ও উৎপাদিত সামগ্রী পরিবহনে সমস্যা নানা কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে বাংলার বহু বছরের এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প। শুধু তাই নয়, প্লাস্টিক, স্টিল, ম্যালামাইন, সিরামিক ও সিলভারসহ বিভিন্ন ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি করা এসব তৈজসপত্রের নানাবিধ সুবিধার কারণে দিন দিন আবেদন হারাচ্ছে মাটির তৈরি দেশীয় শিল্পকর্ম।

মৃৎশিল্প ছবি

শখের মৃৎশিল্প

শখের মৃৎশিল্প এখন বিশেষ বিশেষ সময়ে অনুষ্ঠিত মেলায় দেখা মিলে মাটির তৈরি এসব তৈজসপত্রের। বিশেষ করে বাংলা বছরের শুরুতে ও শেষে এবং বরণ উৎসবে। মেলায় আগতদের ছোট বড় বাচ্চা-কাচ্চাদের হাতে হাতে স্থান পাবে এসব মাটির জিনিস। মঙ্গল শোভাযাত্রায়ও স্থান করে নেয় এগুলো।

মৃৎশিল্প ছবি


বাংলার নান্দনিক মৎশিল্পে সম্ভবনার দুয়ার

বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই শিল্পে অনেকটা ভাটা পড়লেও এই শিল্প নিয়ে নতুন করে আর একটি শাখা উন্মোচিত হয়েছে। সেটি হলো বাংলার নান্দনিক মৎশিল্প। এ শাখার মৎশল্পীরা মাটি দিয়ে নান্দনিক বিভিন্ন শৌখিনসামগ্রী ও শিল্পকর্ম তৈরি করে থাকেন, ইংরেজিতে একে বলা হয় পটারি শিল্প। এরা টেরাকোটা বা মৃৎফলকে খাদাই করে সুন্দর সুন্দর নান্দনিক শাপিস তৈরি করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন মূর্তি, অলঙ্কার, নকশি পাত্র, ঘণ্টা ইত্যাদি তৈরি করে থাকেন। ঢাকাসহ আশেপাশের জেলা শহরগুলোতে অনেক দোকানে এসব শৌখিন মৎসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে।

বাংলার নান্দনিক মৎশিল্প ও মাটির তৈরি জিনিসপত্র


মাটির তৈরি জিনিসপত্র

শুরুর দিকে সকল মৃৎশিল্প কাদামাটি থেকে তৈরি করা হতো; যা কম তাপমাত্রায় ভাটির আগুন বা খোলা চুল্লীর আগুনে পোড়ানো হত। সেগুলো হাতে তৈরি করা হতো এবং নকশা করা হতো না। সেগুলো সাধারণত ৬০০ °সে- ১২০০ °সে তাপমাত্রায় পোড়ানো হত। অবারিত বিস্কুট মাটির পাত্র ছিদ্রযুক্ত হওয়ার কারণে এটির তরল সংরক্ষণের জন্য বা টেবিলের পাত্র হিসাবে ব্যবহারের উপযোগিতা সীমিত। এসব বিভিন্ন ধরনের কাদামাটি দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে, যাদের মহিষের চামড়ার আগুনে পোড়ানো হলে তা লালচে বাদামী রঙ ধারণ করে। লালচে রঙের বস্তুগুলোকে টেরাকোটা বলা হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন