সামাজিক ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এর উপর ভিত্তি করে গঠিত হয় সুন্দর, মনোরম, কর্মক্ষম আর্তমানুষের জন্য সেবামূলক সংগঠন বা সামজিক ফাউন্ডেশন। একটি ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আজ আমারা বিস্তারিত আলোচনা করব।
সামজিক ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের আত্মসামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সাহিত্য- সংষ্কৃতি লালন, পরিবেশ ও মানবাধিকার সংরক্ষন করার একটি তৃণমূল আন্দোলন সৃষ্টি করে দেশ ও মানুষের সেবার আস্থা অর্জন।
১. বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের আত্মসামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি, নেতৃবৃন্দের দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত করণ, তথ্য অধিকার সংরক্ষন, উন্নয়ন বিমুখতা প্রতিহত করন, বাজেট পর্যালোচনা করন, উন্নয়ন সম্ভাবনা চিহ্নিত করে রির্পোট পেশ ও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করন, সর্বোপরি তৃণমূল উন্নয়ন আন্দোলন।
২. সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, বানিজ্যিক উন্নয়ন, শিক্ষা, চিকিৎসা, গবেষণা, প্রযুক্তি ও সমাজ সেবা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন এমন গুনিজনদের দ্বি-বার্ষিক সাধারন সভায় সম্মাননা পদক প্রদান করা হবে। সম্মাননা পদকটির জন্য একটি স্বতন্ত্র ফান্ড গঠনের চেষ্টা করা।
৩. বন্যা দূর্গতের মাঝে তাৎক্ষণিক ত্রাণ কার্যক্রম বিতরণ করা। এ বিষয়ের জন্য নদী ব্যবস্থাপনা, নদীরক্ষা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও দুর্গতদের পুনর্বাসনসহ সার্বিক বন্যা উত্তর পরিস্থিতি মোকাবেলায় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা।
৪. নদী ভাঙ্গন রোধে সচেতনতা সৃষ্টি এবং শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে উন্নয়ন উপযোগী পরিবেশ সংরক্ষণ। এ লক্ষ্যে অস্থায়ী বাধ, বৃক্ষরোপন, বনায়ন, নার্সারী প্রকল্প গ্রহণ করা। অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন, বেড়ীবাধের ক্ষতি করে তাদের বিরুদ্ধে এ সংগঠন আদালতে মামলা করতে পারবে।
৫. অবৈধ নারী ব্যবসা, নারী ও শিশু পাচারকারী, অপহরণকারী ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এ সংগঠন আইনী সহায়তাসহ আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারবেন।
৬. শিক্ষা মূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা যাতে গ্রাম ও শহরের গরীব জনগোষ্ঠির মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটানোর যায়। গণশিক্ষা, শিশু শিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষা, আরবী শিক্ষা দানের জন্য গ্রাম ও শহরের লোকদের আকৃষ্ট করা। উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা অশিক্ষিত জনগোষ্ঠিকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার পাশাপাশি তাদের ব্যবহারিক শিক্ষা দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান এবং দুঃস্থ ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরন প্রদান করা।
৭. প্রতিবন্দী, এতিম, মহিলা ও শিশুদের উন্নয়নে কর্মসূচী গ্রহন করা। দেশের অবহেলিত গরীব ছিন্নমূল শিশুদের পুর্নবাসনের পদক্ষেপ গ্রহন করা এবং তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক ও পরিবেশগত মান উন্নয়ন করা। বৃদ্ধ, দৈহিক অক্ষম ও প্রতিবন্দীদের বাসস্থান ও সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। শারীরিক ও মানসিক অসমর্থ প্রতিবন্দী ও নির্যাতিত মানুষকে পুর্নবাসন করা।
৮. মাদকাশক্তি নিরাময় বিভিন্ন জনসাস্থ্য ক্ষতিকর খাবার অভ্যাস, মানসিক কু-সংস্কার ও সামাজিক অপরাধমূলক প্রবণতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, প্রতিকার, সচেতনতা, চিকিৎসা ও পূর্ণবাসন, গণশিক্ষা,কারীগরি শিক্ষা প্রশিক্ষণ, গবেষণা এবং সর্ব প্রকার সর্ব শ্রেণীর বিশেষতঃ নিম্ন মধ্য শ্রেণী বস্তীবাসী, বাস্তুহারা এবং সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করা এই উপলক্ষে ভবিষ্যত আত্যাধুনিক হাসপাতাল/ক্লিনিক ও পূর্ণবাসন কেন্দ্র স্থাপন ও প্রয়োজনে সম্প্রসারন করা।
৯. পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচীর আওতায় জন্ম নিয়ন্ত্রন ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক শিক্ষা, স্বাস্থ্য সচেতন করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্লিনিক প্রতিষ্ঠানের (যথাযথ কতৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে) মাধ্যমে সেবাদানের ব্যবস্থা করা ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী বিতরণ করা, শিশু জন্ম ও মৃত্যু সংক্রান্ত নিবন্ধন সংরক্ষণ করা।
১০. নারীকে সামাজিক নির্ভরশীলতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করে সমাজে মর্যাদা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক ভূমিকা জোরদার করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা। নারী অধিকার ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মশালা, সিম্পোজিয়াম ও কনফারেন্সের আয়োজনসহ নির্যাতিত মহিলাদের আইনগত সহায়তা প্রদান করা। মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও স্ব-নির্ভর করার জন্য বিভিন্ন দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান।
১১. কৃষি ক্ষেত্রে জন সাধারণকে উদ্বুদ্ধকরণ, উৎসাহ প্রদান এবং এর মাধ্যমে উন্নত পদ্ধতিতে ফলন বৃদ্ধি করতে কৃষকদের শিক্ষার মাধ্যমে যুগোপযোগী কৃষক হিসাবে গড়ে তোলা এবং প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ, বীজ, সার ঔষধ ইত্যাদি সহজে এবং সুলভ মূল্যে প্রদানের ব্যবস্থা করা এবং ছোট বড় হিমাগার প্রতিষ্ঠা করে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে সহযোগিতা করা এবং প্রদর্শনী খামার তৈরী করা। মৌমাছি পালন, রেশম পোকা পালন, হাঁস-মুরগী, মৎস, ছাগল ও গরুর খামার প্রতিষ্ঠা করা এবং এ সম্বন্ধে বেকার যুবক- যুব মহিলা ও সংশ্লিষ্ট চাষীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। মৎস্য ও গবাদী পশু পালন জাতীয় খামার পরিচালনা করা। যাবতীয় কৃষি কর্মে প্রয়োজনে সরকারী খাস জমি লীজ গ্রহণ, ক্রয় বা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তা গ্রহণ করা হবে।
১২. দারিদ্র বিমোচন সম্পর্কিত কর্মসূচীর আওতায় দুঃস্থ ভূমিহীন, বিত্তহীন গৃহহীন এবং নিম্ন আয়ের জনগণ এর জন্য কর্মসূচী গ্রহণ। শিক্ষিত বেকার অবহেলিত যুবক-যুব মহিলা, বিধবা মহিলাদের প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ।
১৩. জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অসামাজিক কার্যকলাপ, মাদকদ্রব্য ও ধুমপান বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা। জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন দিবস পালনার্থে সভা-সমাবেশ, সেমিনার, র্যালী সহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করা। ধুমপান ও অন্যান্য মাদক দ্রব্য বর্জন করার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা, বাল্যবিবাহ, বহু বিবাহ, ইভটিজিং, যৌতুক ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করা, বিবাহ নিবন্ধন (কাবিন কার্যক্রমে সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ), ঝড়, মহামারী ইত্যাদির কারণে দূর্গত মানুষের সেবা ও পুর্ণবাসন কর্মসূচী গ্রহণ। সমাজের অন্ধত্ব ও গোঁড়ামি, সমাজের কুসংস্কার ও নির্যাতন এবং সামাজিক অপরাধমূলক প্রবনতা রোধ করার জন্য বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদির পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনসাধারণ কে উদ্বুদ্ধ ও সহায়তা প্রদান করা। বেওয়ারিশ লাশ দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা।
১৪. মানব সম্পদ উন্নয়নে সামগ্রীক কার্যক্রম গ্রহণ করে দেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটানোর জন্য এবং শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের লক্ষে বিভিন্ন বিষয়ে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা, কম্পিউটার ও ডাটা এন্ট্রি ফার্ম, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ফার্ম প্রতিষ্ঠা করা।
১৫. ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সম্পর্কিত কর্মসূচির আওতায় শিল্প স্থাপন ও সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি, মহিলাদের দেশী বিদেশী রান্নার প্রশিক্ষণ, নকশী কাঁথা বুনন, কাঁথা সেলাই, ব্লক-বাটিক ও বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ প্রশিক্ষণ প্রদান।
১৬. কার্যক্রমের সুবিধার্থে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে কার্যক্রম পরিচালনা। সরকারী ও বেসরকারী সকল সংস্থার সাথে উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে সম্পর্ক স্থাপন এবং জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে অন্যান্য সংস্থার সাথে যোগাযোগ স্থাপন (সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে)।
১৭. ক্যানসার, এইচ, আই, ভি, এইডস, প্লেগ, হেপাটাইটিস-বি, ভাইরাস, সার্স ইত্যাদি মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধে পরিকল্পিত ও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা এবং এ সংক্রান্ত রোগীদের চিকিৎকার ব্যবস্থা করা।
১৮. আর্সেনিক ও অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যমুক্ত বিশুদ্ধ পানি পানে উদ্বুদ্ধকরণ ও এর প্রতিরোধ কর্মসূচী গ্রহণ করা। পানিতে মানব দেহের জন্য আর্সেনিকের ক্ষতিকর মাত্রা নিরূপন করে সে সব এলাকা ও নলকূপ চিহ্নিত করা।
১৯. সংগঠনের স্বার্থে ও কৃষি সহ জনকল্যাণ মূলক কর্মসূচী বাস্তবায়নের প্রয়োজনে সরকারী খাস জমি, অর্পিত সম্পত্তি, ওয়াক্ফ সম্পত্তি লীজ গ্রহণ, ক্রয় বা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত গ্রহণ করা হবে।
২০. পুস্তিকা, সংবাদ সাময়িকী, পোষ্টার, ব্যানার, কার্ড, ক্যালেন্ডার এবং বিভিন্ন গন মাধ্যমে কার্যক্রম প্রকাশ এবং প্রচার করা। সমাজের উন্নয়ন, অপর্কম, ধর্ম ও বর্ণ বৈষম্য দূরীকরণে বার্তা সংস্থা, টিভি চ্যানেল দৈনিক পত্রিকা, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক হিসাবে দেশের প্রচলিত নিয়মে সমগ্র দেশব্যাপী অথবা জেলা ভিত্তিক, আর্ন্তজাতিক ভাবে প্রকাশনা, পরিচালনা করতে পারবে এবং প্রচার মাধ্যমে অর্থাৎ জাতীয় আর্ন্তজাতিক ভাবে প্রকাশনা, পরিচালনা করতে পারবে অর্থাৎ জাতীয় আর্ন্তজাতিক বেতার (রেডিও) সরকারী ও বেসরকারী টিভি চ্যানেলে প্রচার করতে পারবে। প্রজাতন্ত্রের স্বার্থে সরকারের পাশাপাশি সমাজের যে কোন ধরনের অপরাধ-অপকর্ম ও অনিয়মের স্থির চিত্র, ভিডিও চিত্র ধারণ পূর্বক স্বাক্ষী হিসেবে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারবেন এবং জনসাধারণের মধ্যে প্রদর্শন করতে পারবে।
২১. অন্ধ পূর্ণবাসন, বয়স্ক পূর্ণবাসন, কারামুক্ত ও কয়েদী মানসিক প্রতিবন্ধীদের কল্যাণ পরিকল্পনাসহ সমাজের উন্নয়নমূলক যে কোন পরিকল্পনা এই প্রতিষ্ঠান গ্রহণ করবে।
উপরে উল্লেখিত উদ্দেশ্য ছাড়াও সংগঠনের কার্যকরী কমিটির সিদ্ধান্ত ক্রমে সংগঠনের উন্নয়ন কল্পে জাতীয় পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য পূর্ন সময়োপযোগী সমন্বিত ও সম্পূরক কর্মসূচী গ্রহন করা হবে। যেমন-
- বেকারত্ব দূরীকরণ ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি।
- মোটিভেশনাল ক্লাসের ব্যবস্থা।
- প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা (সনদ সহ)।
- ক্ষুদ্র ঋণ সহায়তা।
- চাকরি তথ্য সহযোগিতা।
- যুব ছাত্রদের টিউশনি ও লজিংয়ের ব্যবস্থা করা।
- সব ধরণের সামাজিক অনুষ্ঠান, জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক দিবস পালন করা।
- বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করা।
- সামাজিক বিপন্ন লোকদের কল্যাণ সাধন করা।
- আমাদের সদস্যদের মধ্যে সমবায় মূলক কর্মকান্ড গড়ে তোলা।
- প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় দূর্গতের সহোযোগিতা করা।
- যুব ফান্ড গঠন।
- বিনোদনমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করা।
- যুবকদের সমাজ সেবামূলক কাজে উৎসাহিত করা।
- অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।
nice article
উত্তরমুছুন